https://t.me/DrAkramNadwi/5897
بسم الله الرحمن الرحيم.
❝
|| প্রশ্ন:
আসসালামু আলাইকুম,
শ্রদ্ধেয় মহোদয় !
প্রশ্ন হলো, উসূলুল ফিকহের বাস্তব প্রয়োগ এবং কুরআনের বর্ণনাসমূহে এই জ্ঞানের প্রয়োগের জন্য কোন বইগুলো থেকে উপকৃত হওয়া উচিত?
দয়া করে এ সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিন।
আপনার ভাই: মুফতি নূরুর রহমান উসমানী
শিক্ষা বিভাগের পরিচালক, জামিয়া দারুল উলুম খোস্ত, আফগানিস্তান।
|| উত্তর:
উসূলুল ফিকহে সাধারণত চারটি বিষয়ের আলোচনা হয়:
১. আহকাম— বরং সঠিকভাবে বললে, আহকামের শ্রেণিবিন্যাস, যেমন ফরজ, ওয়াজিব, মুস্তাহাব, মোবাহ, মাকরূহ ও হারাম ইত্যাদি।
২. আহকামের উৎস— অর্থাৎ, এসব বিধানের উৎস কী? যেমন, কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস ইত্যাদি।
৩. আহকাম নির্ণয়ের নীতিমালা— অর্থাৎ, এসব উৎস থেকে বিধান কীভাবে আহরণ করা হবে?
৪. আহকামের উদ্দেশ্য ও কল্যাণ— অর্থাৎ, এই বিধানসমূহ প্রণয়নের মাধ্যমে কী কী উদ্দেশ্য ও কল্যাণ সাধিত হয়?
এই চারটি বিষয়ের মধ্যে তৃতীয়টি, অর্থাৎ আহকাম নির্ণয়ের নীতিমালা সরাসরি আপনার প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত, এবং এটিই এই আলোচনার প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু পরবর্তীকালে যারা উসূলুল ফিকহের ওপর গ্রন্থ রচনা করেছেন, তারা এই বিষয়ের প্রতি এতটাই অবিচার করেছেন যে, এটি প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বহুদিন ধরে পৃথিবীর কোনো মুফতি বা ফকিহ উসূলুল ফিকহের আলোকে কোনো ফতোয়া প্রদান করেন না, বা কোনো ফিকহি গবেষণাও পরিচালনা করেন না। সাধারণত ফিকহ ও ফতোয়ার বিশেষজ্ঞরা পূর্বসূরিদের গ্রন্থে কোনো সমস্যার দৃষ্টান্ত অনুসন্ধান করেন এবং তার ওপর কিয়াস করে ফতোয়া প্রদান করেন। তবে কিয়াস আলাল কিয়াস (এক কিয়াসের ওপর আরেক কিয়াস) একটি ভুল গবেষণা পদ্ধতি। এর চেয়েও দুঃখজনক বিষয় হলো, তারা কিয়াসের দুর্বলতম ধরন, অর্থাৎ কিয়াসুশ শাবাহ (সাদৃশ্যভিত্তিক কিয়াস) ব্যবহার করেন।
উসূলুল ফিকহকে অকেজো করে দেওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে মুতাযিলা গোষ্ঠী। তারা উসূলুল ফিকহে—বিশেষ করে তৃতীয় বিভাগে—সেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেগুলোর সম্পর্ক দর্শন ও কালামের সাথে ছিল। অর্থাৎ, তারা উসূলুল ফিকহে এমন মৌলনীতি যুক্ত করেছে, যা আদর্শগত এবং তাদের নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর ফলে তারা উসূলুল ফিকহকে কুরআন-সুন্নাহর বিশদ আলোচনার পরিবর্তে একটি বিমূর্ত বিদ্যায় রূপান্তরিত করেছে। আশাআরিরাও মুতাযিলাদের এই নীতিগুলো গ্রহণ করেছিল, তবে এতে কিছু আংশিক পরিবর্তন এনেছিল। কিন্তু এর আদর্শিকতা ও বিমূর্ততা অক্ষুণ্ণ রেখেছিল। শাফেয়ি, মালিকি এবং হাম্বলি উসূলুল ফিকহ মূলত এই কালামী উসূলুল ফিকহই। হানাফিদের উসূলুল ফিকহ কিছুটা ভালো অবস্থায় ছিল, কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, হানাফি মুফতিরাও উসূলুল ফিকহকে কার্যত অকার্যকর করে ফেলেছে।
উসূলুল ফিকহের তৃতীয় বিভাগ “আহকাম নির্ণয়ের নীতিমালা” সরাসরি ভাষার সাথে সম্পর্কিত, অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনাসমূহ কীভাবে বোঝা হবে। প্রাচীন علماء (বিদ্বানগণ) এর প্রকৃত স্বরূপ অনুধাবন করেছিলেন এবং ভাষাবিষয়ক সাধারণ নীতিগুলো কুরআন-সুন্নাহর ওপর প্রয়োগ করেছিলেন। এর উদাহরণ ইমাম মালিকের “মুআত্তা”, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান শায়বানির বিভিন্ন গ্রন্থ এবং সহিহ বুখারির ছড়িয়ে থাকা অধ্যায়গুলোতে পাওয়া যায়।
এই বাস্তব উসূলুল ফিকহের সবচেয়ে উপকারী এবং বিস্ময়কর গ্রন্থ হলো ইমাম শাফেয়ির “আর-রিসালাহ”। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, শাফেয়ি মাজহাবের মধ্যেই এটি প্রায় অর্থহীন একটি বইতে পরিণত হয়েছে।
আপনি যদি উসূলুল ফিকহকে বাস্তবমুখী করতে চান এবং এর আলোকে কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনাসমূহকে বিশ্লেষণ করতে চান, তাহলে ইমাম শাফেয়ির “আর-রিসালাহ” বারবার অক্ষরে অক্ষরে পড়ুন। এছাড়া “মুআত্তা”, “কুতুবে জাহিরুর রিওয়ায়াহ” (হানাফিদের প্রসিদ্ধ গ্রন্থসমূহ) এবং “সহিহ বুখারির” থেকে বিধান নির্ণয়ের পদ্ধতি ও উদাহরণগুলো গভীরভাবে অধ্যয়ন করুন।
পরবর্তীকালের মধ্যে ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ এই প্রকৃত উসূলুল ফিকহের যথাযথ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তাঁর “মুকাদ্দিমা ফি উসূলিত তাফসীর”, “আর-রাদ্দু আলাল মানতিকিয়্যিন” এবং ফিকহ ও উসূলুল ফিকহ সম্পর্কিত তাঁর ফতোয়াগুলোর বিভিন্ন খণ্ডে কুরআনের বর্ণনাসমূহ বোঝার মূল্যবান গবেষণা রয়েছে। এগুলো অধ্যয়ন করলে নস বা ঐতিহ্যগত দলিল বোঝার দক্ষতা অর্জিত হবে।
আধুনিক যুগে মাওলানা হামিদউদ্দীন ফারাহী উপলব্ধি করেছিলেন যে উসূলুল ফিকহ বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে। তিনি এই বিষয়ে একটি মানসম্পন্ন গবেষণাধর্মী গ্রন্থ রচনা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর জীবন তা পূর্ণতা লাভ করতে দেয়নি। তবে তাঁর গ্রন্থসমূহ “আর-রাঈ ফি উসূলিশ শারাঈ”, “আসালীবুল কুরআন”, “হিকমাতুল কুরআন” ইত্যাদিতে অনেক কার্যকর বিষয় রয়েছে। এগুলো অধ্যয়ন করুন, বরং মাওলানা ফারাহীর সমস্ত গ্রন্থ গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। এগুলো থেকে জ্ঞান ও উপলব্ধির দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
——————–
# উপদেশ/ পরামর্শ
মূল: ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।