(https://t.me/DrAkramNadwi/5921)
بسم الله الرحمن الرحيم
❝
—————-
তোমরা গর্ব করো যে, রমজানে এক লাখবার استغفار পড়ো। কিছু লোক আছেন, যারা প্রতিদিন শতবার “أستغفر الله” পাঠ করেন। তোমাদের মধ্যে এমনও অনেকে আছেন, যারা কোনো তাসাওউফি তরিকার সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের শেখের নির্দেশ অনুসারে استغفار-এর আমল বারবার করতে থাকেন।
আজ আমি এই কথা বলার ধৃষ্টতা করব যে, তোমরা استغفار-এর মালা জপা ছেড়ে দাও, তাসবীহ পড়া বন্ধ করো, এবং ওরাদ (নির্দিষ্ট জিকির, তাসবিহ) ও ওয়াযিফাকে বিদায় জানাও।
আমার কাছে আসো, আমাকে একটু বলো তো—তোমরা আসলে কোন বিষয় থেকে استغفار করছো?
কোন গুনাহগুলোর জন্য তোমরা তোমার রবের কাছে ক্ষমা চাইছো? তোমরা কি আদৌ জানো, নাকি জানাই নেই যে তোমাদের ভুলগুলো আসলে কী? হয়তো বলবে, অনেক গুনাহ তোমাদের মনে নেই। হ্যাঁ, এ কথাটা ঠিক, সে গুনাহগুলোর ব্যাপারে আমি পরে কিছু বলব। আগে সেই গুনাহগুলোর কথা বলি, যা তোমাদের মনে আছে, বা যা সহজেই স্মরণ করা সম্ভব।
দুঃখের বিষয়, তোমরা তোমাদের দ্বীনের এই মৌলিক শিক্ষা অর্জন করোনি, তোমরা ঠিকভাবে استغفار ও তওবা করতে শেখোনি। যদি তোমরা তা সঠিকভাবে করতে তাহলে তোমরা রব্বুল আলামিনের প্রিয় বান্দা হয়ে যেতে। কিন্তু তোমাদের এই গাফিলতি তোমাদের মালিকুল মুলকের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, তোমাদেরকে নবীদের সুন্নত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তোমাদেরকে এক মৃত জাতিতে পরিণত করেছে, এবং তোমাদের কাছ থেকে তোমাদের সম্মান ও মর্যাদা ছিনিয়ে নিয়েছে।
শোনো, এবং মনোযোগ দিয়ে শোনো! তওবা মানে অনুশোচনা ও লজ্জা। যদি তোমরা সত্যিই তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হও, তাহলে সামান্য সাহস ও চেষ্টা করো—তাহলে এসব ভুল থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারবে।
একবার ভেবে দেখো, সেই বাড়ি, জমি, সম্পদ ও ধন-সম্পদের মালিকানা, যা তোমাদের হাতে রয়েছে—তা কি সত্যিই তোমাদেরই? এমন তো নয় যে, এর ভেতরে তোমাদের বোনদের, ফুফুদের কিংবা অন্যান্য আত্মীয়দের ওয়ারিশ হিসেবে পাওয়ার অধিকার ছিল? এ বিষয়টি জানা কঠিন নয়। খোঁজ-তল্লাশ করো, যার যে প্রাপ্য আছে, তাকে ফিরিয়ে দাও। এ পর্যন্ত যে অন্যের সম্পদ থেকে তোমরা লাভবান হয়েছ, তার হিসাব করো এবং তা তাদের ফেরত দাও। এরপর তাদের কাছে ক্ষমা চাও যে, তাদের অধিকার আদায়ে তোমরা এত বিলম্ব করেছ।
যদি কখনো কারও প্রতি খেয়ানত করো, চুরি করো, বিনা অনুমতিতে কারও কোনো জিনিস ব্যবহার করো, তোমার মুসলিম ভাই-বোনদের কষ্ট দাও, তাদের গিবত করো, কিংবা তাদের ওপর কোনো ধরনের জুলুম করো— তাহলে এসব অধিকার লঙ্ঘনের কথা স্মরণ করো এবং যার যা প্রাপ্য, তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাও।
যে সময় থেকে তোমার ওপর নামাজ ফরজ হয়েছে, তুমি কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় করেছ?
তুমি কি রমজানের ফরজ রোজাগুলো রেখেছ? যদি তোমার ওপর যাকাত ফরজ হয়ে থাকে, তাহলে তুমি কি তা নিয়ম অনুযায়ী আদায় করেছ? আর যদি তুমি সামর্থ্যবান হয়ে থাকো, তাহলে কি তুমি হজ আদায় করেছ? যদি এসব না করে থাকো, তাহলে আল্লাহর এই হকগুলো স্মরণ করো এবং যা ছুটে গেছে তা কাযা করে নাও।
যখন তুমি এসব আদায় করে নেবে, তখন ভাবো—তোমার দ্বারা অবশ্যই এমন অনেক গুনাহ হয়ে থাকবে, যা তোমার মনে নেই। হয়তো তুমি রিয়া (প্রদর্শন) করেছ, দম্ভ দেখিয়েছ, অহংকারে ডুবে গেছ, হয়তো তুমি তোমার পিতামাতাকে কষ্ট দিয়েছ, ভাই-বোনদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছ, আত্মীয়তার হক আদায়ে গাফিলতি করেছ, হয়তো প্রতিবেশীদের প্রতি অন্যায় আচরণ করেছ, সাধারণ মুসলমানদের হক নষ্ট করেছ।
আল্লাহ ও বান্দার হক আদায়ের পর, এখন তুমি একবার অন্তর থেকে অনুতপ্ত হয়ে তোমার রবের কাছে বলো—”হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও!”
গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ভাষা নেই, এটা অবশ্যই আরবিতে হওয়ার দরকার নেই, এর কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। তুমি একবার আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইলে তোমার প্রতিপালক তোমার সব গুনাহ মাফ করে দেবেন, তোমার জন্য আকাশ ও জমিনের বরকতের দরজা খুলে দেবেন এবং তাঁর রহমতের দৃষ্টি তোমার প্রতি ফিরিয়ে দেবেন।
“তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে তোমাদের শক্তিশালী করবেন, তোমাদের জন্য উদ্যানসমূহ সৃষ্টি করবেন এবং প্রবাহিত করবেন নদী।” (সূরা নূহ: ১০-১২)
এরপর অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার করো, কারণ মানুষ ভুলের পুতুল, সে সবসময় গুনাহ করে থাকে। আল্লাহর সামনে বিনয় ও আজিজি সৃষ্টি করো, তাঁর সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতি ও দয়া প্রদর্শন করো। মনে রেখো—যদি তুমি সঠিকভাবে ইস্তিগফার করতে না শেখো, তাহলে তুমি প্রকৃত মুসলিম নও! তোমার ইসলাম ও ঈমান কেবল এক ফাঁকা কাঠামো ও কঙ্কালসার আকৃতি মাত্র।
রমজানের কয়েকটি দিন বাকি আছে, এগুলোকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করো। কুরআনে উল্লিখিত নবীদের উপদেশ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করো এবং উপরোক্ত পদ্ধতিতে তওবা ও ইস্তিগফার করো।
“যারা ঈমান এনেছে, তাদের জন্য কি এখনো সেই সময় আসেনি যে, তাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সত্যের প্রতি নম্র হয়ে যাবে?” (সূরা হাদিদ: ১৬)
হে আমার মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আমি এই মুহূর্তে তোমাদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে চাই না, তোমাদের ঈদের আনন্দে শরিক হতে চাই না। আমার কাছে তোমাদের জন্য খুশির কোনো উপহার নেই। আমি কেবল চাই—তোমরা অন্তরে ব্যথা অনুভব করো, কান্নাকাটি করো, বিলাপ করো, আর রমজান শেষ হওয়ার আগেই পাপমুক্ত হয়ে যাও!
“আজকের দিনে এই বাজারে আমাদের সঙ্গে কোনো কামনা-বাসনার কথা নেই।
আমি কাঁদতে থাকা চোখ বিক্রি করছি, ভেজা আঁচল কিনতে চাই।”
———————
✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।