بسم الله الرحمن الرحيم
=
:: লিখেছেন: ড. মুহাম্মদ আকরাম নদভী অক্সফোর্ড।
:: অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।
✍️ প্রশ্ন:
মাওলানা মুহাম্মাদ ফারুক সাহেব নদভী, যিনি আসামে বসবাসকারী এবং দোহা নিবাসী, আমাদের নিকটবর্তী ও প্রিয় বন্ধু। তিনি স্বভাবিকভাবে একজন সাহিত্যিক, তাঁর চিন্তায় সততা ও ভারসাম্য বিদ্যমান। তিনি ধর্ম এবং মতবাদের পার্থক্য ভালোভাবে বোঝেন
এবং ধর্মে কঠোরতা ও মতবাদের ক্ষেত্রে বিস্তারের পক্ষে। তাঁর পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত বার্তা এসেছে:
“জনাব ড. মুহাম্মদ আকরাম নদভী সাহেব (হাফি.) এর কাছ থেকে আশা করা হচ্ছে যে, ইসলামি ও অনৈসলামি পোশাকের উপর একটি বিস্তারিত এবং প্রমাণভিত্তিক প্রবন্ধ প্রকাশ করবেন, যা অনুসরণ করে আমরা আমাদের ঈমান ও ইসলাম ধরে রাখতে পারি। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।”
✅ উত্তর:
এই সমস্যার বিষয়ে মানুষের মনে অত্যন্ত মাত্রাতিরিক্ত এবং অপ্রতুল ধারণা রয়েছে।
এর ফলস্বরূপ, উপমহাদেশে এক ধরণের কঠোরতা দেখা দিয়েছে, যা “ইসলামি মেকআপ” নামে পরিচিত। সাধারণ আলেম ও মাশায়েখদের কাছে এই মেকআপকেই ধার্মিকতার প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। যারা এই মেকআপ গ্রহণ করে না, তাদের ধর্মবিমুখ বলে মনে করা হয়, আর যারা গ্রহণ করে, তাদের ধার্মিক বলে আখ্যা দেওয়া হয়। এই মেকআপকেই অনেকেই শরিয়তি বা ইসলামি পোশাক বলে অভিহিত করেন।
এখানে প্রয়োজন হলো ধর্ম ও সংস্কৃতির পার্থক্য স্পষ্ট করা, কারণ এর পরবর্তী ব্যাখ্যা এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য বোঝার উপর নির্ভরশীল। ধর্ম হলো আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের পথ, যা মূলত ঈমান ও ইসলামের স্তম্ভসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে। আনুগত্যের ক্ষেত্রটি ব্যাপক, এতে হালাল ও হারামের বিধানগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সংস্কৃতি একটি জাতি বা সমাজের সমষ্টিগত ধারণা, প্রথা এবং অভ্যাসের নাম, যা সেই জাতি বা সমাজের বিশ্বাস ও ঐতিহ্য দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। যদি এই বিশ্বাস ও ঐতিহ্য শিরক বা অবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে থাকে, তবে সেই সংস্কৃতি ইসলাম থেকে দূরে থাকবে এবং তা গ্রহণযোগ্য হবে না যতক্ষণ না তা শুদ্ধ হয়। তবে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য নিজস্ব সংস্কৃতি পরিত্যাগ করা আবশ্যক নয়, বরং সেই সংস্কৃতির শুদ্ধিকরণ বাধ্যতামূলক।
:: উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন জাতির মধ্যে খাবার তৈরি করার পদ্ধতি কিছু ক্ষেত্রে ইসলামের সাথে বিরোধপূর্ণ এবং কিছু ক্ষেত্রে বিরোধপূর্ণ নয়। ইসলাম হালাল ও হারাম প্রাণীর বিশদ বিবরণ প্রদান করেছে এবং হালাল প্রাণীদের আল্লাহর নামে জবাই করা শর্ত করেছে।
এদিকে, হালাল প্রাণী জবাই করার পর তাদের মাংস কীভাবে রান্না করা হবে এবং কী কী খাবার তৈরি করা হবে, সে সম্পর্কে ইসলামের কোনো নিষেধ নেই। নবী ﷺ ভুনা মাংস খেতেন, তিনি ছারিদ (মাংস ও রুটি) ও খেতেন। ভারতীয়রা কাবাব, কোরমা, বিরিয়ানি এবং আরও অনেক খাবার তৈরি করে থাকে। সেন্ট্রাল এশিয়ায় “বুখারি পোলাও” জনপ্রিয়। তুরস্কে ভিন্ন খাবার রয়েছে, এবং সিরিয়া ও লেবাননের খাবার ভিন্ন। যে কোনো খাবার হালাল হলে, তা যেকোনো সংস্কৃতির মাধ্যমে প্রস্তুত করা হলেও তা ইসলামি হবে।
এভাবে পোশাকের ক্ষেত্রে প্রথমে দেখতে হবে শরীরের কোন অংশ ঢাকার প্রয়োজন এবং কোন পোশাক শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম নয়। অর্থাৎ, কোনো পোশাক ইসলামী বা শরিয়তি হতে হলে দুটি শর্ত আছে :
1️⃣
প্রথম শর্ত হলো, পোশাকটি শরীরের অঙ্গ ঢাকার জন্য সক্ষম হতে হবে। পুরুষ ও নারীর জন্য শরীরের অঙ্গ ঢাকার বিধান ভিন্ন , এবং সাধারণভাবে এগুলো পরিচিত। এর বিস্তারিত জানা সহজ।