AkramNadwi

ইবাদতের দোয়া এবং সাহায্য প্রার্থনার দোয়া।

https://t.me/DrAkramNadwi/3836

بسم الله الرحمن الرحيم.


পাকিস্তান থেকে প্রফেসর সাইফুল্লাহ ফয়জী সাহেব একটি প্রশ্ন করেছেন:

|| প্রশ্ন :

“নবী করিম ﷺ বলেছেন, ‘সবচেয়ে উত্তম দোয়া হলো আরাফার দিনের দোয়া, এবং আমি যা বলেছি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ যা বলেছেন, তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো :
لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير.
অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। সমস্ত জগৎ তাঁরই রাজত্ব এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁরই জন্য। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।’

এই শব্দগুলো কীভাবে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া হতে পারে? এতে তো কেবল আল্লাহর প্রশংসা ও ক্ষমতার স্বীকৃতি রয়েছে।”

|| উত্তর :

এটি সুনান আত-তিরমিজি, কিতাব আদ-দাওয়াত, বাব ‘ ফি দুয়া’ই ইয়াওমে আরাফাহ’-এর একটি হাদিস। ইমাম তিরমিজি বলেছেন:

حدثنا أبو عمرو مسلم بن عمرو الحذاء المديني قال حدثني عبد الله بن نافع عن حماد بن أبي حميد عن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده أن النبي صلى الله عليه وسلم قال خير الدعاء دعاء يوم عرفة وخير ما قلت أنا والنبيون من قبلي لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير قال أبو عيسى هذا حديث غريب من هذا الوجه وحماد بن أبي حميد هو محمد بن أبي حميد وهو أبو إبراهيم الأنصاري المديني وليس هو بالقوي عند أهل الحديث۔

এখানে আমরা এই সনদ সম্পর্কে কারিগরি এবং অর্থগত দিক থেকে আলোচনা করবো :

|| কারিগরি দিক :

সনদের দিক থেকে এটি একটি দুর্বল হাদিস। কিছু লোক এর বিভিন্ন সূত্রের কারণে এটিকে ‘হাসান’ বলে অভিহিত করেছেন। আমরা এখানে কোনো একটি মতকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করব না। তবে এটুকু বলব, যখন কোনো ব্যক্তি তার রবের দিকে মনোযোগ দেয়, তখন দুর্বল বর্ণনার চেয়ে শক্তিশালী উৎস থেকে দোয়া নেওয়াই উত্তম। কুরআন কারিম এবং সহিহ হাদিসে বহু দোয়ার শব্দ উল্লেখ পাওয়া যায়। এগুলো মুখস্থ করা উচিত এবং গ্রহণযোগ্য সময়ে সেগুলোই ব্যবহার করা উচিত।

তবে মনে রাখতে হবে, এই হাদিসের প্রতি আপত্তি আরাফার দিনের প্রেক্ষাপটে। কিন্তু এখানে যে জিকির বলা হয়েছে, তা সহিহ। সহিহ বুখারি এবং সহিহ মুসলিম-এ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এই জিকির এসেছে। আর কোনো সন্দেহ নেই যে,
لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير.
মহান আল্লাহর একত্ব, তাসবিহ এবং প্রশংসার সর্বোচ্চ শব্দ। এবং বান্দাদের উচিত এ শব্দগুলোর অর্থ অনুধাবন করে বারবার উচ্চারণ করা। এগুলোর হৃদয়গ্রাহী প্রভাব অপরিসীম এবং এটি মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক।

|| অর্থগত দিক :

উপরে উল্লেখিত শব্দগুলো হাদিসে দোয়ার প্রেক্ষাপটে এসেছে। ‘দোয়া’ এবং ‘দাওয়াত’-এর অর্থ হলো ডাকা বা আহ্বান করা। ইসলামি পরিভাষায় এই শব্দটি আল্লাহ তাআলাকে আহ্বান করার জন্য ব্যবহৃত হয়। আল্লাহকে আহ্বানের দুটি ধরন রয়েছে:

১. দোয়া ইবাদত:

এক প্রকার দোয়া হলো ইবাদতের দোয়া। অর্থাৎ ইবাদতের উদ্দেশ্যে আল্লাহকে ডাকা। এর মধ্যে নামাজ, তাসবিহ, তাহমিদ এবং জিকিরের সব ধরনের রূপ অন্তর্ভুক্ত। এই অর্থে কুরআনে বারবার এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন:

“فَادۡعُوۡهُ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ.
( সুতরাং তোমরা তাঁকেই ডাক, তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে।)
।” (সূরা গাফির – ৬৫)

اِنَّا كُنَّا مِنۡ قَبۡلُ نَدۡعُوۡهُ ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡبَرُّ الرَّحِیۡمُ.
(আমরা পূর্বেও আল্লাহকে আহবান করতাম, তিনিতো কৃপাময়, পরম দয়ালু।)
(সূরা তুর -২৮)

وَ قَالَ رَبُّكُمُ ادۡعُوۡنِیۡۤ اَسۡتَجِبۡ لَكُمۡ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَكۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِیۡ سَیَدۡخُلُوۡنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِیۡنَ.
(আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’)
(সূরা গাফির – ৬০)

২. দোয়া ইস্তিআনাত:

অর্থাৎ সাহায্য চাওয়ার জন্য বা কোনো কিছু প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহকে ডাকা। উর্দু ভাষায় সাধারণত এই অর্থেই ‘দোয়া’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এই শব্দটি এই অর্থে এসেছে। যেমন:

وَّ لَمۡ اَكُنۡۢ بِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِیًّا
(হে আমার রব, আপনার নিকট দো‘আ করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি’।)
(সূরা মারিয়াম – ৪)

وَ لِلّٰهِ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی فَادۡعُوۡهُ بِهَا ۪
আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক।
(সূরা আ’রাফ -১৮০)

|| উপরের হাদিসে দোয়ার অর্থ :

উপরোক্ত হাদিসে দোয়া দু’আয়ে ইবাদত (উপাসনার দোয়া) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই অর্থ স্পষ্ট হওয়ার পর আর কোনো অস্পষ্টতা থাকে না।

তবে এ কথাও মনে রাখা উচিত যে দু’আয়ে ইবাদত এবং দু’আয়ে ইস্তেআনাত (সহায়তার দোয়া)-এর মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যখন মানুষ আল্লাহর উপাসনা করে, তাঁর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করে, তখন আল্লাহ তাকে বিরাট প্রতিদান দেন এবং তার দুনিয়া ও আখিরাতের প্রয়োজন মিটিয়ে দেন।

এই দুনিয়াতেও আপনি লক্ষ্য করবেন, যখন আপনি কোনো সম্মানিত ও উদার ব্যক্তির প্রশংসা করেন, তখন তিনি আপনার প্রতি দয়ালু হন। প্রাচীনকালে কবিরা বাদশাহদের প্রশংসা করতেন, ফলে তারা পুরস্কার পেতেন। এটা পুরস্কার গ্রহণের সবচেয়ে শোভন উপায়।

ঠিক একইভাবে, যখন একজন বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তখন সেটি তাঁর ইবাদতের সমতুল্য হয়ে যায়। কারণ সে সৃষ্টজীব থেকে মুখ ফিরিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করে। এজন্য দোয়াকে শ্রেষ্ঠ ইবাদত বলা হয়েছে।

কোরআনের এই আয়াতে দুই ধরনের দোয়াকে একত্রিত করা হয়েছে:

তোমরা তোমাদের রবকে ডাক অনুনয় বিনয় করে ও চুপিসারে। নিশ্চয় তিনি পছন্দ করেন না সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে। শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপিত হওয়ার পর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না, আর তাঁকে ভয়-ভীতি ও আশা-ভরসা নিয়ে ডাকতে থাক, আল্লাহর দয়া তো (সব সময়) তাদের নিকটে আছে যারা সৎ কাজ করে।
(সূরা আ’রাফ, আয়াত ৫৫-৫৬)

হাদিসে এ কথাও রয়েছে যে, মানুষ যিকিরের উক্ত শব্দগুলো উচ্চারণ করার পর আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো চাইতে পারে। অর্থাৎ এই শব্দগুলো আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায় এবং তাঁর রহমত ও দানের দরজা খুলে দেয়। এরপর আমরা যা চাই, তা তাঁর কাছ থেকে চাইতে পারি।

আল্লাহ আমাদের তাঁর ইবাদত করার এবং শুধুমাত্র তাঁর কাছেই প্রার্থনা করার তাউফিক দান করুন। আমিন।

—– —–

মূল : ড. মুহাম্মাদ আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা :
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *