AkramNadwi

আল্লাহর বাণী : “إياك نستعين” এর অর্থ ❞

https://t.me/DrAkramNadwi/5834

بسم الله الرحمن الرحيم.

সহায়তা চাওয়া সবকিছুতেই সাধারণ। আমরা আমাদের প্রতিপালক, মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহর সাহায্য চাই যাতে আমরা সৎকর্ম করতে পারি এবং পাপ থেকে বিরত থাকতে পারি। এতে শিষ্টাচার রক্ষার দিকটিও রয়েছে, কেননা আমরা বলিনি: “আমাদের সাহায্য কর, কারণ আমরা তোমার ইবাদত করি।” বরং আমরা ইবাদতের মাধ্যমটিকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে উল্লেখ করেছি, এবং আমাদের বলা “وإياك نستعين”-এ আরেকটি মাধ্যমও আছে। শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং শুধুমাত্র তাঁর কাছেই সাহায্য চাওয়া—এই দুটি বিষয়ই তাঁকে পাওয়ার অন্যতম বড় মাধ্যম। আর দোয়ার শর্ত হলো, বান্দা যা কিছু নিজের কাছে আছে তা নিঃশেষ করে ফেলে, তারপর সে তার রবের কাছে চায়।

আমি বললাম: মুফাসসিরগণের সাধারণ ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার অর্থ ব্যাপক। কিন্তু আমার মনে হয়, আল্লাহর সাহায্য চাওয়া মানে সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া। এর প্রমাণ হলো বনী ইসরাইলের ঘটনা, যেখানে বলা হয়েছে:

“মূসা তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন: আল্লাহর সাহায্য চাও ও ধৈর্য ধারণ করো।” সূরা আল-আরাফ ১২৮)

একই নির্দেশ বনী ইসরাইলকে অন্য এক জায়গায় দেওয়া হয়েছে, যেখানে আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার পরিবর্তে সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার কথা বলা হয়েছে:

“তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও।” (সূরা আল-বাকারা ৪৫)

আরেক জায়গায় বলা হয়েছে:

“আমি মূসা ও তাঁর ভাইয়ের কাছে ওহি পাঠালাম: তোমরা তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য মিসরে ঘর তৈরি করো, এবং তোমাদের ঘরগুলোকে কেবলা বানাও ও সালাত কায়েম করো।” (সূরা ইউনুস ৮৭)

তাই তাদের জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়া ছিল সালাত কায়েম করা।

নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার সর্বোত্তম মাধ্যম হলো সালাত।

বনী ইসরাইলের মতো এই উম্মতকেও “وإياك نستعين” এর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইতে বলা হয়েছে, তারপর অন্যান্য স্থানে আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার পরিবর্তে সালাতের সাহায্য নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেমন:

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও।” (সূরা আল-বাকারা ১৫৩)

আল-কুরআনের স্পষ্ট ইঙ্গিত হলো, আল্লাহর সাহায্য চাওয়া মানে সালাতের সাহায্য চাওয়া। এ বিষয়টি নবীগণের কাহিনীতেও বিদ্যমান।

যখন জাকারিয়া (আ.) তাঁর রবের কাছে সৎসন্তান চাওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি সালাতের দিকে ফিরে গেলেন:

“অতঃপর ফেরেশতাগণ তাকে আহ্বান করলেন, যখন তিনি মিহরাবে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন।” (সূরা আলে-ইমরান ৩৯)

এমনটিই ইঙ্গিত পাওয়া যায় ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইয়াকুব, ইউসুফ, মূসা ও মরিয়ম (আলাইহিমুস সালাম) এর ঘটনাবলিতে।

আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তেন, তখন সালাতের দিকে ফিরে যেতেন।

আহমদ ও আবু দাউদের হাদিসে এসেছে, হুজাইফা (রা.) বলেন:
“নবী (সা.) যখন কোনো সংকটে পড়তেন, তখন তিনি সালাত আদায় করতেন।”

সহীহ হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) বলেন:
“পূর্ববর্তী নবীগণ যখন কোনো বিপদে পড়তেন, তখন তারা সালাতের দিকে ছুটে যেতেন।” (হাদিসটি সহীহ)

কেউ হয়তো বলতে পারেন: “إياك نعبد” বাক্যের মধ্যেই তো সালাত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে! তাহলে যদি “إياك نستعين” এর ব্যাখ্যা সালাত ধরা হয়, তবে এটি কি পুনরুক্তি নয়?”

আমি বলি: হ্যাঁ, এটি সেই বিশেষ পুনরুক্তি, যেখানে সাধারণের পরে বিশেষকে উল্লেখ করা হয়। কুরআনে এর অনেক উদাহরণ আছে।
যেমন, আল্লাহ বলেন:
“আমি তো আল্লাহ, আমার বাইরে কোনো উপাস্য নেই। সুতরাং তুমি আমার ইবাদত করো ও আমার স্মরণের জন্য সালাত কায়েম করো।” (সূরা ত্বাহা ১৪)

এখানে ইবাদতের আদেশের পাশাপাশি সালাত কায়েম করার আদেশও এসেছে।
সুরা আল-ফাতিহার আরেক নাম হলো “সুরাতুস সালাত”—এর মাধ্যমে এই অর্থ আরও সুস্পষ্ট হয়।
অতএব, “إياك نستعين” অর্থ: আমরা কেবল তোমার জন্য সালাত আদায় করি।
এটি সেই আদেশের প্রতি সাড়া, যেখানে আল্লাহ বলেন:
“সুতরাং তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো।” (সূরা আল-কাওসার ২)

এটি সেই অর্থের প্রতিফলন, যেখানে আল্লাহ বলেন:
“তোমার রবের দিকে ঝুঁকে পড়ো।” (সূরা আল-ইনশিরাহ ৭)

অনেক সালাফ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহর প্রতি ঝুঁকে পড়া মানে সালাত আদায় করা। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।

——————–

# তাফসির

লিখেছেন :
মুহাম্মাদ আকরাম নাদভী – অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *