https://t.me/DrAkramNadwi/5831
بسم الله الرحمن الرحيم.
———————
আল্লাহ তাআলা বলেন:
” وأقبل بعضهم على بعض يتساءلون، قالوا إنكم كنتم تأتوننا عن اليمين، قالوا بل لم تكونوا مؤمنين، وما كان لنا عليكم من سلطان، بل كنتم قوما طاغين”
“তারা একে অপরের দিকে ফিরে প্রশ্ন করবে। তারা বলবেঃ তোমরাতো তোমাদের শক্তি নিয়ে আমাদের নিকট আসতে। জবাবে তারা (নেতৃস্থানীয় কাফিররা) বলবে, ‘বরং তোমরা তো মুমিন ছিলে না’। আর তোমাদের উপর আমাদের কোন কর্তৃত্ব ছিল না, বরং তোমরা ছিলে সীমালঙ্ঘনকারী কওম’।
(সূরা আস-সাফফাত, আয়াত ২৭-৩০)
এটি জাহান্নামে অনুসরণকারীদের ও তাদের নেতাদের মধ্যকার বিতর্কের বর্ণনা, যেখানে দুর্বলরা তাদের প্রভাবশালীদের বলবে: “তোমরা তো আমাদের ডান দিক থেকে আসতে”—এ বাক্যের অর্থ কী?
এ সম্পর্কে মুফাসসিরদের বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ বলেছেন:
“মানুষ জিনদের উদ্দেশ্যে বলবে: ‘হে জিনেরা! তোমরা আমাদের ধর্ম ও সত্যের দিক থেকে এসে প্রতারণা করতে, আমাদেরকে সবচেয়ে প্রবল উপায়ে বিভ্রান্ত করতে।’” আরবদের ভাষায় “ডান দিক” (يمين) শব্দটি শক্তি ও ক্ষমতার অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি অনেক মুফাসসিরের মতামত, যা ইমাম তাবারী তাঁর তাফসিরে উল্লেখ করেছেন।
আল-জামাখশারি বলেন :
“এর অর্থ হলো: তোমরা আমাদের কাছে শক্তি ও ক্ষমতার দিক থেকে আসতে এবং আমাদের ওপর কর্তৃত্ব ও প্রভাব খাটিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করতে। তোমরা আমাদেরকে বাধ্য করতে ও জোরপূর্বক পথভ্রষ্ট করতে।” এই উক্তি হলো অনুসারীদের দ্বারা তাদের নেতাদের প্রতি এবং পথভ্রষ্টদের দ্বারা তাদের শয়তানদের প্রতি।
ফখরুদ্দীন আর-রাজী এ বিষয়ে সব মতামত সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন:
১️⃣ প্রথম ব্যাখ্যা:
এখানে “ডান দিক” শব্দটি কল্যাণ ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে استعارة (রূপক) হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ:
ডান দিককে সাধারণত বাম দিকের চেয়ে সম্মানজনক মনে করা হয়।
উত্তম কাজ সাধারণত ডান হাতে করা হয়, যেমন: সৎ লোকদের সঙ্গে করমর্দন, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি।
আরবরা ডান দিককে শুভ লক্ষণ বলে মনে করত।
রাসূল ﷺ সকল বিষয়ে ডান দিককে পছন্দ করতেন।
শরিয়তের বিধানে ডান দিকে নেক আমল লেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আর বাম দিকে পাপ লেখা হয়।
কিয়ামতের দিন সৎ ব্যক্তিরা তাদের আমলনামা ডান হাতে পাবে, আর গুনাহগাররা বাম হাতে।
এই কারণে “তোমরা তো আমাদের ডান দিক থেকে আসতে” অর্থ দাঁড়ায়: তোমরা আমাদের বিভ্রান্ত করেছিলে এই দাবি করে যে, তোমাদের ধর্মের দাওয়াত সত্য ও সঠিক পথের পক্ষে ছিল।
২️⃣ দ্বিতীয় ব্যাখ্যা :
কোনো ব্যক্তিকে “অমুকের ডান হাত” বলা হলে বুঝায়, সে তার প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি।
অতএব, কাফিররা তাদের নেতাদের বলবে: “তোমরা আমাদের বুঝিয়েছিলে যে, আমরা তোমাদের কাছে বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত, তাই আমরা তোমাদের বিশ্বাস করেছিলাম ও অনুসরণ করেছিলাম।”
৩️⃣ তৃতীয় ব্যাখ্যা:
কাফিরদের নেতারা তাদের অনুসারীদের শপথ করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তাদের দেখানো পথই সত্য। ফলে দুর্বলরা তাদের নেতাদের শপথ ও অঙ্গীকারের ওপর আস্থা রেখেছিল।
অতএব, “তোমরা তো আমাদের ডান দিক থেকে আসতে” এর অর্থ হলো: “তোমরা আমাদের শপথ ও অঙ্গীকারের দিক থেকে এসে প্রতারিত করেছিলে।”
৪️⃣ চতুর্থ ব্যাখ্যা:
“ডান দিক” শব্দটি শক্তি ও কর্তৃত্ব বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়, কারণ সাধারণত হাতের মাধ্যমে শক্তি প্রয়োগ করা হয়।
অতএব, এর অর্থ দাঁড়ায়: “তোমরা আমাদের ওপর জবরদস্তি ও ক্ষমতার মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে বিভ্রান্ত করেছিলে।”
(ফখরুদ্দীন আর-রাজীর আলোচনা এখানেই শেষ হয়।)
|| আমি বলেছি:
সঠিক ব্যাখ্যা পর্যন্ত পৌঁছতে হলে দুটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়া জরুরি:
প্রথমত:
কুরআন মাজিদ প্রাচীন আরবদের শৈলীতে অবতীর্ণ হয়েছে। তাদের ভাষায় সংক্ষেপণের ব্যাপক ব্যবহার ছিল, কারণ তারা শ্রোতাদের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তির ওপর নির্ভর করত। আমি বিভিন্ন স্থানে ব্যাখ্যা করেছি যে, আরবদের ভাষা বুদ্ধিমান ও সচেতন ব্যক্তিদের ভাষা। তারা অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘতা অপছন্দ করত এবং যেখানে সংক্ষেপ করা সম্ভব, সেখানে অতিরিক্ত ব্যাখ্যা ও বাগাড়ম্বরকে ঘৃণার চোখে দেখত।
সংক্ষেপণের এই শৈলী আল-বাকিলানি, আল-জুরজানি, আল-জামাখশারি ও অন্যান্য বিদ্বানদের গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। আর আল্লামা হামিদুদ্দীন আল-ফারাহি তাঁর অনন্য গ্রন্থ “أساليب القرآن” (আসলিবুল কুরআন)-বইয়ে এ বিষয়ের অসাধারণ বিশ্লেষণ করেছেন। তাই কুরআন শিক্ষার্থীদের উচিত এই গ্রন্থ গভীর মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করা।
দ্বিতীয়ত:
জাহান্নামের অধিবাসীরা তর্কপ্রিয় জাতি। তারা তীব্র বিতর্ক ও কঠোর বাদানুবাদে লিপ্ত হবে। বিতার্কিকরা সাধারণত কথার পুনরাবৃত্তি, অস্বীকার, মতবিরোধ, পারস্পরিক দোষারোপ ও আত্মপক্ষ সমর্থনে লিপ্ত থাকে। এখানে অর্থ হলো:
যখন অনুসারীরা বলল, “তোমরা তো আমাদের ডান দিক থেকে আসতে”, তখন নেতারা তাদের বাক্য শেষ করতে দেয়নি; বরং তাদের কথার মাঝখানে হস্তক্ষেপ করে বলল: “বরং তোমরা কখনোই ঈমানদার ছিলে না।”
তাহলে অনুসারীদের বাক্যের পরিপূর্ণতা কী?
এর উত্তর হলো:
আমরা আল্লাহর কিতাবে অনুরূপ কথাবার্তা খুঁজে দেখেছি এবং পেয়েছি যে, অভিশপ্ত শয়তান বলেছে:
“সে বলল, যেহেতু তার কারণেই (পথ থেকে) আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছ, কাজেই আমি অবশ্যই তোমার সরল পথে মানুষদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকব। তারপর অবশ্যই তাদের নিকট উপস্থিত হব, তাদের সামনে থেকে ও তাদের পেছন থেকে এবং তাদের ডান দিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’।
” (সূরা আল-আরাফ: ১৬-১৭
এই চিন্তাভাবনা আমাদেরকে এখানে সঠিক অর্থের দিকে পথ দেখিয়েছে, যা হলো:
দুর্বলরা বলতে চেয়েছিল: “তোমরা আমাদের কাছে আসতে ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকে, সামনে থেকে ও পিছন থেকে, আমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে এবং আমাদেরকে কুরআন শোনার ও নবী ﷺ-এর কাছে বসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে।”
কিন্তু যখন তাদের কথার শুরু অংশ নেতাদের কানে পৌঁছাল, তখন তারা এটি ঘৃণার চোখে দেখল। তারা এই তিরস্কার ও ভর্ত্সনা অপছন্দ করল এবং তাদেরকে থামিয়ে দিয়ে বলল:
“বরং তোমরা কখনোই ঈমানদার ছিলে না।”
——————
# তাফসীর
লিখেছেন :
মুহাম্মাদ আকরাম নাদভী – অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।