https://t.me/DrAkramNadwi/3784
بسم الله الرحمن الرحيم
❝
——————–
প্রশ্ন:
একজন ভদ্রলোক প্রশ্ন করেছেন: ভারতে ইসলামি মাস সাধারণত সৌদি আরবের এক বা দুই দিন পরে শুরু হয়। যেদিন হাজিরা আরাফাতে অবস্থান করেন, সেদিন আমাদের এখানে জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ হয়। এবং যেদিন আমাদের এখানে ৯ তারিখ হয়, তখন হাজিরা মিনায় পৌঁছে রমি (পাথর নিক্ষেপ), কুরবানি ইত্যাদি করেন। প্রশ্ন হলো: যদি আরাফার দিনের ফজিলত আরাফাতে অবস্থানের (ওকুফ) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়, তাহলে আমরা কোন দিন রোজা রেখে সেই ফজিলত অর্জন করব?
উত্তর:
আরাফার দিন হলো জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ, এবং এটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি দিন। হাজিদের জন্য তো এই দিনের ফজিলত জানা কথাই। যারা হজে অংশগ্রহণ করছেন না, আল্লাহ তাআলা কেবল তাঁর অনুগ্রহে তাদের জন্যও বিশেষ সওয়াবের সুযোগ রেখেছেন। বরং পুরো জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে বেশি বেশি তাকবীর ও জিকির করা উচিত। আর আরাফার রোজা এর ওপর অতিরিক্ত ফজিলতযুক্ত।
সহিহ মুসলিমের একটি সহিহ হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
আরাফার দিনের রোজা পূর্ববর্তী বছর এবং পরবর্তী বছর — এই দুই বছরের গোনাহ মাফ করে দেয়।
এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত। আমরা প্রতিদিন কত গোনাহ করে থাকি! এই একদিন রোজা রাখার মাধ্যমে দুই বছরের গোনাহ মাফ হয়ে যায়। বড় গোনাহসমূহ তওবা ও ইস্তিগফার দ্বারা মাফ হয়, আর যদি গোনাহ না থাকে, তাহলে ঐ পরিমাণে মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। তাই এই মহামূল্যবান সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয় — তার জন্য চেষ্টা করা উচিত।
এটি ছিল ভূমিকা। এখন মূল প্রশ্নের জবাবে আসা যাক। তা বুঝতে হলে আগে এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে: সময় সংক্রান্ত বিষয়ে আল্লাহ তাআলার একটি নির্দিষ্ট বিধান আছে — মানুষ যেখানে আছে, তার জন্য সেই জায়গার সময়ই গণ্য হবে।
যেমন: আপনি যদি লখনউ-তে থাকেন, তাহলে ফজরের নামাজ পড়বেন লখনউ-এর ফজরের সময় অর্থাৎ সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পর এবং সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত। যোহরের নামাজ পড়বেন লখনউ-এর সূর্য ঢলে যাওয়ার পর এবং মাগরিব পড়বেন সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে। আপনি নামাজের সময়সূচির ক্ষেত্রে মক্কা বা মদিনার ক্যালেন্ডার অনুসরণ করবেন না।
আল্লাহ তাআলা সময়ের সঙ্গে যে ফজিলত নির্ধারণ করেছেন, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। যেমন: তাহাজ্জুদের সময় হলো বিশেষ রহমতের সময়। জাপানে যখন তাহাজ্জুদের সময় হবে, তখন সেই রহমত জাপানে থাকবে। সময় অতিক্রম করার সাথে সাথে সেই রহমত পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। যখন ভারতে তাহাজ্জুদের সময় হবে, তখন জাপানে সূর্য উঠে যাবে। এটা প্রত্যেকেই তার অভিজ্ঞতায় দেখে থাকেন।
উদাহরণস্বরূপ: জুন মাসে দুপুরবেলা লখনউ-তে প্রচণ্ড গরম থাকে, কিন্তু ঠিক একই সময়ে লন্ডনে থাকবে মনোরম সকাল। সকালের সৌন্দর্য যেমন আছে বারানসীতে, তেমনি সন্ধ্যার নান্দনিকতা আছে উদয়ের শহরে — এই সময়গুলো প্রত্যেক জায়গার নিজস্ব সময় অনুযায়ী নির্ধারিত, জাপান বা আমেরিকার সময় অনুযায়ী নয়।
ঠিক একইভাবে, লখনউ-তে ইফতার হবে সূর্যাস্তের পর এবং সেহরি হবে লখনউ-এর ক্যালেন্ডার অনুযায়ী।
এভাবেই আরাফার দিনের বরকতের ব্যাপারটি।
যেখানে যখন জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ হবে, তখন সেই জায়গায় আরাফার বরকত থাকবে। যদি ভারতে ৯ জিলহজ্জ সৌদি আরবের একদিন পর পড়ে, তাহলে ভারতের মানুষ নিজেদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রোজা রাখবে, যদিও তখন হাজিরা মিনায় রমি বা কুরবানি করছেন। একইভাবে ভারতের কুরবানির দিন হবে ভারতের জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ। ভারতীয়রা নিজেদের ক্যালেন্ডার অনুসরণ করবে এবং অন্য জায়গার লোকজন তাদের নিজ নিজ ক্যালেন্ডার অনুসরণ করবে।
প্রত্যেক শহর বা অঞ্চলের মুসলমানদের উচিত তাদের নিজ এলাকার স্বীকৃত সিদ্ধান্তকারীদের অনুসরণ করা। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটিই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
তিরমিজি শরিফসহ অন্যান্য গ্রন্থে একটি প্রসিদ্ধ হাদিস এসেছে:
“তোমাদের রোজার দিন সেই দিন, যেদিন তোমরা রোজা রাখো; তোমাদের ঈদের দিন সেই দিন, যেদিন তোমরা ঈদ উদযাপন করো; এবং তোমাদের কুরবানির দিন সেই দিন, যেদিন তোমরা কুরবানি করো।”
অর্থাৎ: রমজান, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা — এগুলো সামাজিক অনুষ্ঠান। প্রতিটি জায়গার মুসলমানরা তাদের নিজস্ব সমাজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ দিনগুলো পালন করবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের এই বরকতময় দিনগুলোতে অধিক পরিমাণে নেক আমল করার এবং গোনাহ থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন।
আমিন।
——————–
✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍ অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।