আমার দাওয়াতি ও শিক্ষাকেন্দ্রে যাকাতের অর্থ ব্যবহার করা যাবে কি?
——————–
|| প্রশ্ন
প্রসিদ্ধ শিক্ষিকা ও সম্মানিত দাঈয়া ড. ফারহাত হাশমি সাহেবা নিম্নলিখিত প্রশ্ন পাঠিয়েছেন :
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ,
আমাদের আলহুদা ক্লাস সমূহ বর্তমানে ম্যানচেস্টারে চলছে। আমরা চাই একটি স্থায়ী ভবন কিনতে, যাতে সেখানে আরও বেশি ক্লাস ও বিভিন্ন ধরনের দীনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায়। প্রশ্ন হলো—
যাকাতের অর্থ কি এ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে? এটা কি “ফি সাবিলিল্লাহ” খাতের অন্তর্ভুক্ত হবে? যেহেতু মসজিদ নির্মাণে যাকাত ব্যবহার করা যায় না, তাহলে কি দীনী শিক্ষা ও দাওয়াতি কার্যক্রমের জন্য ভবন কেনায় যাকাত দেওয়া বৈধ হবে? যদি এ বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য ফতোয়া থেকে থাকে তবে দয়া করে আমাদের দিকনির্দেশনা দিন, যাতে আমরা অন্যদেরও আশ্বস্ত করতে পারি।
জাযাকুমুল্লাহু খায়রা!
|| উত্তর :
ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ,
যাকাতের ফরজিয়ত এবং এর খরচের খাতগুলো আল্লাহ তায়ালা কুরআনে স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেন:
“নিশ্চয় দান (যাকাত) হল ফকীর, মিসকীন ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও যাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তি ও ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে (ব্যয়ের জন্য) আর মুসাফিরের জন্য। এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফরয। আর আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, মহাবিজ্ঞানী। ।”
(সূরা আত-তাওবা: ৬০)
এই আয়াতে যাকাতের আটটি খাত বর্ণনা করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো “ফি সাবিলিল্লাহ”।
ফকীহদের এক শ্রেণির মতে, “ফি সাবিলিল্লাহ” এর অর্থ কেবল যুদ্ধ বা সামরিক ব্যয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পরিধি আরও ব্যাপক। এর অন্তর্ভুক্ত—
ইসলামের প্রচার ও প্রসার,
কুরআন-সুন্নাহ শিক্ষা,
সমাজসংস্কার,
আল্লাহর পথে দাওয়াত,
এবং এমন সব কেন্দ্র গড়ে তোলা যেখানে মানুষকে ইসলামের মৌলিক শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত করা হয়।
এই ভিত্তিতেই সমসাময়িক বহু ফিকহি পরিষদ ও খ্যাতনামা আলেমগণ ফতোয়া দিয়েছেন যে, খাঁটি দীনী শিক্ষামূলক ও দাওয়াতি প্রতিষ্ঠানগুলো যাকাত গ্রহণ করতে পারে।
এই অবস্থানকে সমর্থন করেছে মাজমা আল-ফিকহ আল-ইসলামী (OIC), ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফাতওয়া অ্যান্ড রিসার্চ, এবং আরও বহু আন্তর্জাতিক ফিকহি প্রতিষ্ঠান। তাদের মতে, বর্তমান সময়ে দীনী শিক্ষা ও তার প্রসারের জন্য গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রগুলোকে যাকাত দেওয়া উম্মাহর প্রয়োজন এবং “ফি সাবিলিল্লাহ” এর প্রকৃত অর্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অতএব, ম্যানচেস্টারে আপনার ক্লাস ও যে ভবন কেনার পরিকল্পনা করছেন, যদি তার উদ্দেশ্য হয়—
দীনী শিক্ষা প্রসার,
কুরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা,
সমাজসংস্কার,
এবং দাওয়াতি কার্যক্রম—
তাহলে এর জন্য যাকাতের অর্থ ব্যবহার করা সঠিক ও বৈধ হবে।
তবে এ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে—
ভবন ও এর ব্যয় থেকে কোনো ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিক লাভ গ্রহণ করা যাবে না।
সমস্ত অর্থ কেবল দীনী কাজে ব্যয় করতে হবে।
——————–
ক্যাটাগরি : ফিকাহ, ফাতাওয়া।
—
✍️ মূল রচনা: ড. মুহাম্মদ আকরাম নাদভী, অক্সফোর্ড
✍️ অনুবাদ, যাচাই ও সম্পাদনা: মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ
—
🔗 অনূদিত মূল প্রবন্ধের লিংক: 👇
https://t.me/DrAkramNadwi/6821