https://t.me/DrAkramNadwi/2446
بسم الله الرحمن الرحيم.
❝
মাদ্রাসার স্নাতকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য ❞
———————
মাদ্রাসার স্নাতকেরা প্রায়ই প্রশ্ন করেন: “আমরা কী করব?”
এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর সঠিক উত্তর জানা থাকলে আপনি আপনার ভবিষ্যৎকে কার্যকর ও মূল্যবান করে তুলতে পারবেন এবং এটিকে অপচয় হওয়া বা নিজের ও উম্মাহর জন্য ক্ষতিকর হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবেন।
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দুটি অংশে বিভক্ত, এবং উভয়ই একে অপরের সাথে সম্পর্কিত:
১) আপনাকে কী করা উচিত নয়?
২) আপনাকে কী করা উচিত?
|| আপনাকে কী করা উচিত নয়?
এই তালিকায় চারটি বিষয় রয়েছে, যা আপনার জন্য ক্ষতিকর। এগুলো আপনাকে ভুল পথে পরিচালিত করবে এবং আপনার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেবে। সেগুলো হলো—
1️⃣ ধন-সম্পদ অর্জনকে জীবনের লক্ষ্য বানাবেন না। এতে কোনো সমস্যা নেই যে আপনি অর্থ উপার্জন করবেন, তবে এটি যেন কেবল একটি মাধ্যম থাকে, উদ্দেশ্য নয়। আপনার হৃদয় থেকে ধন-সম্পদের লালসা মুছে ফেলুন এবং কখনোই দুনিয়ার জন্য দ্বীন ও নৈতিক মূল্যবোধকে বিসর্জন দেবেন না।
2️⃣ খ্যাতি ও পদমর্যাদার লোভ থেকে বেঁচে থাকুন
এটি ধন-সম্পদের লোভের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা শুধু আপনাকে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতই করবে না, বরং এটি আপনার চিন্তাশক্তিকেও দুর্বল করে দেবে এবং আপনাকে অর্থহীন কাজে ব্যস্ত রাখবে। এতে আপনি শয়তান ও নিজের প্রবৃত্তির খেলার পাত্র হয়ে পড়বেন এবং নিজের ও উম্মাহর জন্য কোনো কল্যাণকর কাজ করতে পারবেন না।
3️⃣ আল্লাহকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন না
মানুষ তো দূরের কথা, ফেরেশতারা পর্যন্ত আল্লাহকে প্রভাবিত করতে পারে না। তাই কোনো ইবাদতে বাড়াবাড়ি করবেন না এবং ভারসাম্য বজায় রেখে আল্লাহর আনুগত্য করুন।
4️⃣ মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন না।
যে কাজ শুধুমাত্র অন্যদের মন জয় করার জন্য করা হয়, তা আসলে ফাঁপা হয়ে যায়। এতে বাহ্যিক দিকটিই মুখ্য হয়ে ওঠে, অথচ ভিতরের শক্ত ভিত্তির প্রতি মনোযোগ কমে যায়। এখানে কোনো নির্দিষ্ট উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে না, তবে আপনি যদি একটু ভাবেন, তাহলে নিজের চারপাশে এমন অনেক উদাহরণ খুঁজে পাবেন।
|| আপনি কী করবেন?
আপনি চারটি কাজের মধ্যে এক বা একাধিক বেছে নিতে পারেন। তবে তার আগে হালাল জীবিকা অর্জন করা অপরিহার্য, যা কমপক্ষে এতটা হতে হবে যে আপনি এবং আপনার পরিবার যথাযথভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।
এই হালাল রুজি আপনার নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী উপার্জন করা সম্ভব, অথবা ব্যবসা বা চাকরির মাধ্যমে সম্পদ উপার্জন করতে পারেন। যদি এতে আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় হয়, তবুও এতে চিন্তার কিছু নেই। কারণ, হালাল জীবিকা ছাড়া আপনি কিছুই করতে পারবেন না, আর জীবনের বিভিন্ন সমস্যা আপনাকে হারাম পথে ঠেলে দিতে পারে, অথবা অন্যের মুখাপেক্ষী বানিয়ে দিতে পারে, কিংবা আপনি দীনকে দুনিয়া হাসিলের মাধ্যম বানিয়ে ফেলবেন।
নিচে চারটি কাজের উল্লেখ করা হলো, আপনার সামর্থ্য, পরিস্থিতি ও পরিবেশ অনুযায়ী যে কোনো একটি বেছে নিন:
১️⃣ দাওয়াত ও তাবলিগ :
= অর্থাৎ অমুসলিমদের কাছে ইসলামের বার্তা পৌঁছানো।
এটি নবীদের মৌলিক কাজ, তাই আপনাকে তাঁদের চরিত্র ও কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
= কুরআন ও রাসূলের জীবনী গভীরভাবে অধ্যয়ন করুন।
= মাওলানা আমিন আহসান ইসলাহী রচিত “دعوت دین اور اس کا طریقۂ کار” বইটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
= যখন দাওয়াতের মূলনীতি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং নিজের জীবন ঈমান ও সৎকর্মে প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন অমুসলিমদের কাছে যান।
= কুরআনের বিভিন্ন অংশের ব্যাখ্যা বোঝান।
= তাদের আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান আনার আহ্বান জানান।
= নবীদের ইতিহাস তুলে ধরুন এবং জান্নাত-জাহান্নামের বিষয়গুলো স্পষ্ট করুন।
= তাদের সন্দেহ ও বিভ্রান্তিগুলো বুঝুন এবং প্রজ্ঞার সঙ্গে নরম ব্যবহার করে তাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করুন।
২️⃣ সংশোধন ও দিকনির্দেশনা :
= অর্থাৎ মুসলমানদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা, সঠিক পথে পরিচালিত করা, সমাজ থেকে অন্যায় দূর করা।
= কুরআন ও রাসূলের জীবনী গভীরভাবে অধ্যয়ন করুন।
= এ বিষয়ে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী বই রয়েছে:
1. শহীদ হাসান আল বান্না রচিত “مذكرات الدعوة والداعية”
2. মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রচিত “مولانا محمد الياس اور ان کی دینی دعوت”
যখন সংশোধনমূলক কার্যক্রমের মূলনীতি ভালোভাবে বুঝে ফেলবেন, তখন প্রায়োগিক ক্ষেত্রে নামবেন।
= কুরআনের পাঠদান শুরু করুন।
= সহিহ ও হাসান হাদিসের সংকলন (যেমন: রিয়াদুস সালেহিন) পড়ানো শুরু করুন।
= নবী, সাহাবা ও নেককার ব্যক্তিদের পবিত্র জীবনধারা মানুষের সামনে তুলে ধরুন।
= মুসলমানদের নৈতিক ও ধর্মীয় অবক্ষয়ের কারণ খুঁজে বের করুন।
= কোন চিন্তাধারা মুসলমানদের নিজের ধর্ম ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বা উদাসীন করছে, তা বিশ্লেষণ করুন।
= বর্তমানে শিক্ষিত সমাজে নাস্তিকতা ও ধর্মহীনতার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা যদি অবহেলিত হয়, তবে একদিন আমাদের সমাজের বড় অংশ বিভ্রান্ত ও বিপথগামী হয়ে পড়বে।
৩️⃣ কল্যাণমূলক কাজ :
= অর্থাৎ মানবজাতির পার্থিব প্রয়োজন পূরণে তাদের সহায়তা করা।
= এর অন্তর্ভুক্ত এতিম, বিধবা, বৃদ্ধ ও গরিবদের কল্যাণে কাজ করা।
= এই কল্যাণমূলক কাজ মুসলমানদের মধ্যেও করুন এবং অমুসলিমদের মধ্যেও।
= নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে কল্যাণমূলক কাজ করা ব্যক্তিদের জীবন অধ্যয়ন করুন এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করুন।
= এই কাজকে ব্যবসার মতো করবেন না, এবং কোনো স্বার্থ হাসিলের মাধ্যম বানাবেন না।
৪️⃣ একাডেমিক জীবন :
অর্থাৎ শিক্ষাদান ও রচনাকর্ম।
যদি আপনি একাডেমিক জীবন বেছে নিতে চান, তবে ভাবুন কোন বিষয়ে আপনার দক্ষতা রয়েছে।
এই বিষয় হতে পারে:
= কুরআন, তাফসির, উলূমুল কুরআন, হাদিস ও সীরাহ, ফিকহ ও ফতোয়া, ইতিহাস, দর্শন, ভাষা ও সাহিত্য ইত্যাদি।
= আপনি এই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করুন, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করুন, এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুন, এবং মৌলিক ও মানসম্পন্ন গ্রন্থ অধ্যয়ন করুন।
যদি আপনি শিক্ষাদানের সঙ্গে যুক্ত হন:
= নিজের বিষয়গুলো গভীরভাবে ও বিস্তৃতভাবে অধ্যয়ন করুন।
= সহজ ভাষা ও ভঙ্গিতে আপনার শিক্ষার্থীদের জ্ঞান প্রদান করুন।
= তাদের চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটান এবং বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের দক্ষতা বৃদ্ধি করুন।
= বক্তৃতামূলক ধরন গ্রহণ করবেন না, অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের শুধু প্রভাবিত করবেন না, বরং উপকারও করবেন।
= অবনমিত মানের শিক্ষাদান ক্ষতিকর, কারণ আমাদের নতুন প্রজন্মকে উন্নত জাতিগুলোর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে।
= আমাদের শিক্ষার মান উন্নত দেশগুলোর তুলনায় যদি উত্তম না হয়, অন্তত তাদের সমতুল্য হওয়া উচিত।
যদি আপনি রচনাকর্মে নিযুক্ত হন:
= গভীর গবেষণা ও বিশ্লেষণ করুন।
= অনুকরণের পথ পরিহার করুন।
= সত্যকে অন্বেষণে অবিরাম প্রচেষ্টা চালান, এবং তা নির্ভীকভাবে প্রকাশ করুন।
= সেসব বিষয়ে গবেষণা করুন যা মুসলমানদের জাতীয় ও সামাজিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য।
= অপ্রাসঙ্গিক ধর্মতাত্ত্বিক বিতর্ক ও অর্থহীন দার্শনিক আলোচনায় সময় নষ্ট করবেন না।
= লেখায় অগভীরতা পরিহার করুন এবং কখনো সাংবাদিকতার ধরন গ্রহণ করবেন না।
= একজন সাংবাদিকের লক্ষ্য সত্যে পৌঁছানো নয়, বরং পাঠকদের প্রভাবিত করা, যা প্রয়োজনে মিথ্যা ও বিভ্রান্তির আশ্রয়েও হতে পারে।
= বর্তমানে শিক্ষার মতো রচনাক্ষেত্রেও অন্যান্য জাতিগুলো আমাদের চেয়ে এত এগিয়ে যে আমাদের ও তাদের মধ্যে কোনো তুলনাই চলে না।
“কিন্তু কলম শত্রুর হাতে রয়েছে।”
|| শেষ কথা:
অলসতা থেকে বেঁচে থাকুন।
= মানসিক ও শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
= এই চারটি ক্ষেত্রের মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরি করুন।
= একজন অন্যের সহযোগী হোন।
= জাতীয় চেতনা গড়ে তুলুন এবং নিজেকে জাতীয় আবেগে উদ্বুদ্ধ করুন।
= মনে রাখবেন, জাতীয় শক্তি যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায়।
——————-
# উপদেশ/পরামর্শ # নসিহত
লিখেছেন :
মুহাম্মাদ আকরাম নাদভী – অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।