AkramNadwi

আপনার প্রভুর জন্য ধৈর্য ধারণ করুন” (وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ)

https://t.me/DrAkramNadwi/2023

بسم الله الرحمن الرحيم


————–

হে মুসলমান!
তুমি ছিলে সেই জাতি, যে দুনিয়াকে ন্যায়বিচারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলে। স্থল ও জল, জনপদ ও নির্জন অঞ্চল—সর্বত্র তুমি ইনসাফের পতাকা তুলে ধরেছিলে।
বিশ্বের জাতিগুলো তোমার শাসনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। তুমি দুর্বল ও নির্যাতিতদের আশ্রয়দাতা ছিলে, অসহায় ও নিরুপায়দের স্বস্তির জন্য তুমি ধন-প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিলে। আপনজন ও পর—সবাই তোমাকে ভালোবাসত এবং মাথার মুকুট করে রাখত।

কিন্তু আজ তুমি চিন্তিত ও অস্থির। কেননা, তোমার বিরুদ্ধে ঘৃণার পরিবেশ গরম করে তোলা হচ্ছে। তোমাকে জুলুম-নিপীড়নের লক্ষ্যে পরিণত করা হচ্ছে। তোমার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণকারীদের উসকানো হচ্ছে। তোমাকে অপমানিত করা হচ্ছে।
তোমার নবীকে গালাগাল দেওয়া হচ্ছে, তোমার নিদর্শনগুলিকে বিদ্রূপ করা হচ্ছে। আগে তোমার জ্ঞানের যুক্তি দ্বারা ধর্ম ও মতবাদগুলো পরাভূত হতো—আর এখন প্রতিটি ফালতু লোকও তোমার বিরুদ্ধে কথা বলছে।
তোমার ওপর নির্বোধ ও বর্বরদেরকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তুমি মানবজাতিকে সমতার পাঠ পড়িয়েছিলে। লোকেরা যখন জাতপাত ও শ্রেণিবিভক্তির মধ্যে পিষ্ট হচ্ছিল, তখন তুমি তাদের মুক্তি দিয়েছিলে।
তুমি হৃদয়কে হৃদয়ের সঙ্গে মিলিয়েছিলে। তুমি ছিলে মানবজাতির সহানুভূতিশীল, তুমি ছিলে অসহায়দের সহযোগী, দুঃখীদের সঙ্গী ও রোগীদের সান্ত্বনা-দাতা।

এখন তোমাকে দেখতে হচ্ছে সেই দিন, যখন তোমার সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। তোমার ধর্মের কারণে তোমাকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তোমার জীবন সংকীর্ণ করে তোলা হচ্ছে।
গতকালের দরিদ্র, ভিখারি, সংকীর্ণচিত্ত, অহংকারে মাতাল, নতুন ধনী—এখন তোমার উপহাস করছে।
তুমি ভাবছো—কীভাবে নিজের ঘরের দেখভাল করবে, যখন প্রতিদিন এর একেকটি অংশ ভেঙে পড়ছে!

তুমি শেখালে যে কল্যাণ ও অকল্যাণের মালিক আল্লাহ। তোমার দারিদ্র্যও ছিল সৌভাগ্যের প্রতীক, তোমার ধনসম্পদও ছিল বরকতময়।
তোমার সমাবেশ ছিল বুদ্ধিজীবীদের মিলনমেলা, তোমার সভা ছিল সম্মানিতজনের আসর।
তুমি কখনও কোনো জাতিকে রোগ-ব্যাধি বা দুর্ভাগ্যের কারণে বিদ্রূপ করোনি।

তুমি কী কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছ, যখন একটি পরিকল্পিত উপায়ে তোমাকে অশুভ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। রোগব্যাধির উৎস হিসেবে তোমার ধর্মকে দোষারোপ করা হচ্ছে—
(قَالُوا تَطَيَّرْنَا بِكَ وَبِمَن مَّعَكَ)—”তারা বলেছিল, তোমাকে ও তোমার সাথীদের আমরা অশুভ মনে করি।”

তোমাকে বিপদ-আপদের কারণ বলা হচ্ছে। তুমি দুনিয়াকে দ্বীনের ধনভাণ্ডার দিয়ে সিক্ত করেছিলে এবং জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেছিলে।
তোমার ঘর ছিল জ্ঞানী ও হেকিমদের আশ্রয়স্থল। আর এখন তুমি অজ্ঞ ও মূর্খদের তরবারির শিকার হয়েছো।

তোমার প্রাসাদের গম্বুজ ছিল আসমান ছোঁয়া সম্মানের প্রতীক। এখন সেখানে দুর্ভাগ্যের আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
তোমার আনন্দময় ঘরবাড়ি ছিল চারদিকে ছড়িয়ে থাকা, আর এখন তোমার প্রতিটি সমাবেশ শোকময় হয়ে গেছে।
তুমি মরুর বুকে পথহারা এমন এক কাফেলা, যার হাতে নেই কোনো ব্যান্ড বা পতাকা।
দিনে মাটি খোঁড়ো, রাতে তারা গণনা করো।

তুমি ভাবছো—এই পৃথিবী তো তোমার প্রভুর সম্পত্তি (إِنَّ الْأَرْضَ لِلَّهِ)। তিনি সমস্ত রাজত্বের মালিক (مَالِكُ الْمُلْكِ)।
তিনিই আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। তাহলে কীভাবে তাঁর প্রতি ঈমান আনা বান্দাদের তাঁর রাজ্যে বসবাসের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে?
তাঁদের কীভাবে সর্বস্বহীন করে তোলা হচ্ছে?

সম্ভবত তুমি ভুলে গেছ যে, তোমার পালনকর্তা তাঁর বান্দাদের অটলতার পরীক্ষা নেন। জালিমদের থেকে প্রতিশোধ নেওয়া ও তাদের ধ্বংস করা তাঁর জন্য খুবই সহজ।
কিন্তু তিনি তাঁর হিকমতের কারণে তাদেরকে অবকাশ দেন।

তোমার কাজের দিকে নজর দাও—আজকের এই দিন তোমার গাফিলতার ফল। খারাপ কাজের পরিণাম সবসময় খারাপই হয়।
তুমি সময়ের নালিশ করো না। তোমার প্রভুর অভিযোগ কোরো না। বরং তাঁর সঙ্গে তোমার আনুগত্যের অঙ্গীকার আরও দৃঢ় করো।
তোমার ঈমানকে মজবুত করো। আল্লাহর কিতাবের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করো। নবীদের পথের ওপর অটল থাকো।
তোমার কাজগুলো সংশোধন করো। শিক্ষা ও জীবিকার হালাল পথ অবলম্বন করো। নৈতিকতা উন্নত করো। নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করো।

এই পরিস্থিতিতে ভয় বা হতাশা ছাড়া দৃঢ়তা ও ধৈর্য দেখাও।
তোমার প্রভু কখনও বিলীন হবেন না। তাঁর শক্তির কোনো সীমা নেই।
যখন তোমার প্রভুর এই সিদ্ধান্ত (لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِينَ) আসবে—”নিশ্চয়ই আমরা জালিমদের ধ্বংস করব”—
তখন জালিমরা ইতিহাসের অতীত হয়ে যাবে। আসমান তাদের জন্য কান্না করবে না, জমিনও চোখের পানি ফেলবে না।

আল্লাহর জমিনে অহংকারের সঙ্গে চলাফেরা করা যাদের অভ্যাস ছিল—তাদের মাটির নিচে নামিয়ে দেওয়া হবে।

এটি সেই সিদ্ধান্ত, যা শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে—
“নিশ্চয়ই আমরা আমাদের রাসূলদের এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের সাহায্য করব” (إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا)
“আর আমরা চাচ্ছি যে, যাদেরকে জমিনে দুর্বল করা হয়েছে, তাদের প্রতি অনুগ্রহ করি, তাদেরকে নেতা বানাই, তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানাই” (وَنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ)

তিনি রহমান ও রহিম, পিতা-মাতার চেয়েও বেশি স্নেহশীল।
তিনি সূর্য-চন্দ্রের স্রষ্টা, তিনি সিংহাসন-সম্রাটদের ক্ষমাশীল দাতা।
তিনি সেই শ্রেষ্ঠ ও মহান আল্লাহ, যিনি বিনা কারণে, বিনা প্রশ্নে, বিনা দাবিতে দান করেন।
তাঁর অনুগ্রহ এতটাই ব্যাপক যে, গোটা সৃষ্টি তা শোকর আদায় করে শেষ করতে পারবে না।

অতএব, তাড়াহুড়ো কোরো না।
তুমি এখন রমজান মাসে আছো—ধৈর্যের অনুশীলন করো।
ভোগবিলাস ও স্বেচ্ছাচারিতা থেকে ফিরে আসো।
মাথা মাটিতে ঝুকাও, তোমার রবকে খুশি করো।
তাঁর কথা মানো এবং তাঁর আদেশ মানতে আনন্দবোধ করো।

আল্লাহর আদেশ মানায় তোমার উপকারই উপকার—তাতে কোনো ক্ষতি নেই।
তাঁর প্রতিশ্রুতি তো এই—”তোমরা যদি তাঁর কথা মানো, তাহলে অবশ্যই সফল হবে।”

————–

✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *