AkramNadwi

আকল ও ক্বলবের মধ্যকার সম্পর্ক।

https://t.me/DrAkramNadwi/5961

بسم الله الرحمن الرحيم.

————–

আমি পূর্বে বেশ কিছু প্রবন্ধ প্রকাশ করেছি যেখানে ফিতরাতের (প্রকৃতিক গুণাবলি) পরিচয়, জ্ঞানের উৎস এবং আক্‌লের কাজ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই নতুন প্রবন্ধটি বোঝার জন্য সেগুলো পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। তাই কেউ যেন তাড়াহুড়া করে আমার ওপর কোনো মন্তব্য না করে, বরং সেগুলো আগে পড়ে নেয়।

মানুষের মধ্যে হৃদয় হলো রাজা, আর ইন্দ্রিয়, আক্‌ল, বরং সম্পূর্ণ দেহ এবং আত্মা তার অধীন। হৃদয় সেই জিনিস চায় যাকে সে ভালো মনে করে এবং যেটিকে অপছন্দ করে তা থেকে বিরক্ত হয়। সে যদি পছন্দের জিনিস পায়, তাহলে শান্তি ও সুখ লাভ করে। আর তা না পেলে কষ্ট ও দুঃখভোগ করে। যদি তার কাছে অপছন্দের কিছু আসে, তবে তা কষ্টদায়ক হয়; আবার যদি সে তা থেকে মুক্তি পায়, তবে সে শান্তি পায় এবং সুখী হয়। হৃদয় ভালো ও মন্দের বিচার করে তার নিজের ভেতরে নিহিত ফিতরাত অনুযায়ী এবং আক্‌লের সাহায্যে। আক্‌ল হলো তার মন্ত্রী ও পরামর্শদাতা।

আক্‌ল ইন্দ্রিয়গত বিষয়ে নির্ভর করে পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের ওপর, যেটি সাধারণভাবে জানা কথা। আর যা দৃশ্যমান জগতের বাইরে, সেসব বিষয়ে আক্‌ল অহীর ওপর নির্ভর করে। এসব বিষয় আমি আগের কোনো প্রবন্ধে আলোচনা করেছি। আক্‌ল কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে কি নেই তা নির্ধারণ করে এসব উৎস ও তার বিশ্লেষণ থেকে। অর্থাৎ, আক্‌ল অস্তিত্বের বিষয়ে হ্যাঁ বা না বলে হয় পর্যবেক্ষণ করে, না হয় বিশ্লেষণের মাধ্যমে। আক্‌ল তার সিদ্ধান্তে — তা বস্তুগত হোক বা নৈতিক — কারণ ও ফলাফল, প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া, উপাদান ও ফলাফল ইত্যাদির সম্পর্ক বুঝে বিচার করে। আক্‌ল তখন ভুল করে, যখন সে অনুমান ও ধারনার ওপর ভিত্তি করে বিচার করে, অথচ তার কাছে থাকা প্রমাণের সত্যতা যাচাই করে না। আমি এক প্রবন্ধে আক্‌লের এই ভুল আগে ব্যাখ্যা করেছি, তাই এখানে তা পুনরায় বলছি না।

হৃদয়ও অনেক সময় ভুল করে, সীমা অতিক্রম করে বা ঘাটতি করে বসে। এর দুটি প্রধান কারণ:

প্রথমত: সে যখন ফিতরাতকে উপেক্ষা করে এবং প্রবৃত্তির কাছে পরাজিত হয়ে পড়ে। তখন সে এমন জিনিস ভালো মনে করে যা সে চায়, আর যেটি সে চায় না তা খারাপ মনে করে।

দ্বিতীয়ত: সে যখন আক্‌লকে উপেক্ষা করে এবং আক্‌লকে ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক সুন্দর কিছু পাওয়ার জন্য, ক্ষণস্থায়ী ভোগ-সম্ভার, দেহগত আনন্দ এবং বাহ্যিক চাহিদা পূরণের জন্য। অথচ উচিত ছিল, আক্‌লকে ব্যবহার করা প্রকৃত ভালো অর্জনের জন্য।

এই ভুল সংশোধনের জন্য হৃদয়ের ওপর জোর দিতে হবে যেন সে ফিতরাতের ডাকে সাড়া দেয় এবং আক্‌লের পরামর্শ শোনে।

তাহলে, সেই প্রকৃতিক “ভালো” কী, যার দিকে হৃদয়কে মনোযোগী হওয়া উচিত, যাতে সে প্রকৃত সুখ পায়? সেটি হলো, যা তার জন্য উপকারী এবং যার উপকারিতা স্থায়ী। আর বিপরীত হলো খারাপ, যার ক্ষতি স্থায়ী। যদি হৃদয় এমন কোনো ক্ষণস্থায়ী ভালোবাসার দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে তা থেকে সে কিছু সময়ের জন্য সুখ পায়, কিন্তু যখন তা চলে যায়, তখন সে চিরস্থায়ী দুঃখে পড়ে। এ কারণেই সত্য অনুসন্ধানী ইব্রাহিম (আঃ) বলেছিলেন: “আমি অস্তগামীদের ভালোবাসি না” — কারণ অস্তগামীদের ভালোবাসা মানে দুঃখ ও কষ্ট।

তবে হৃদয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ উপায় কী, যাতে সে আক্‌লের কথা শোনে? তা হলো: আক্‌লকে ব্যবহার করা প্রকৃতিক চাহিদা পূরণের জন্য। তখন সে পার্থক্য করতে পারবে —
প্রবৃত্তির অনুসরণ ও ইচ্ছা পূরণের মাধ্যমে যে আনন্দ ও উপকার আসে, আর
ফিতরাতকে সন্তুষ্ট করে যে আনন্দ ও উপকার আসে — এই দুটির মাঝে।
এবং পার্থক্য করতে পারবে:
স্থায়ী কষ্ট ও ক্ষতির মাঝে এবং
সাময়িক কষ্ট ও ক্ষতির মাঝে, যেগুলো শেষ পর্যন্ত স্থায়ী আনন্দ ও উপকার এনে দেয়।

এটা তখনই সম্ভব, যখন হৃদয় বিশুদ্ধ হয় এবং অপবিত্রতা ও নাপাকতা থেকে মুক্ত হয়। এ কারণেই নবীদের আহ্বান ছিল হৃদয়কে পবিত্র করার প্রতি:
“সফল হলো সে ব্যক্তি, যে নিজেকে পবিত্র করলো।”
পবিত্র হৃদয়ের লক্ষণ হলো, সে তার প্রতিপালকের দিকে ফিরে আসে এবং তাঁর ইবাদতে লিপ্ত হয়:
“সে তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে এবং সালাত আদায় করে।”
এবং এতে নিহিত রয়েছে চিরন্তন ও স্থায়ী সুখ।

—————-

✍ মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
✍অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *