https://t.me/DrAkramNadwi/5823
بسم الله الرحمن الرحيم.
আল্লাহ তা’আলা তাঁর মহিমান্বিত কিতাবে বলেন :
,
وَ عَلَّمَ اٰدَمَ الۡاَسۡمَآءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمۡ عَلَی الۡمَلٰٓئِكَۃِ ۙ فَقَالَ اَنۡۢبِـُٔوۡنِیۡ بِاَسۡمَآءِ هٰۤؤُلَآءِ اِنۡ كُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ. قَالُوۡا سُبۡحٰنَكَ لَا عِلۡمَ لَنَاۤ اِلَّا مَا عَلَّمۡتَنَا ؕ اِنَّكَ اَنۡتَ الۡعَلِیۡمُ الۡحَكِیۡمُ. قَالَ یٰۤاٰدَمُ اَنۡۢبِئۡهُمۡ بِاَسۡمَآئِهِمۡ ۚ فَلَمَّاۤ اَنۡۢبَاَهُمۡ بِاَسۡمَآئِهِمۡ ۙ قَالَ اَلَمۡ اَقُلۡ لَّكُمۡ اِنِّیۡۤ اَعۡلَمُ غَیۡبَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۙ وَ اَعۡلَمُ مَا تُبۡدُوۡنَ وَ مَا كُنۡتُمۡ تَكۡتُمُوۡنَ.
আর তিনি আদমকে নামসমূহ সব শিক্ষা দিলেন তারপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। সুতরাং বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’। তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান। আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’। তিনি বললেন, ‘হে আদম, এগুলোর নাম তাদেরকে জানাও’। অতঃপর যখন সে এগুলোর নাম তাদেরকে জানাল, তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি, নিশ্চয় আমি আসমানসমূহ ও যমীনের গায়েব জানি এবং জানি যা তোমরা প্রকাশ কর এবং যা তোমরা গোপন করতে’?
(সূরা আল-বাকারা: ৩১-৩৩)
মানুষ এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছে যে, সেই নামগুলো দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে, যা আল্লাহ তা’আলা আদম (আ.)-কে শিখিয়েছেন। এই মতপার্থক্য তাফসিরের কিতাবগুলোতে উল্লেখিত হয়েছে এবং এটি সুপরিচিত ও প্রসিদ্ধ; তাই আমরা তা এখানে তুলে ধরার প্রয়োজন বোধ করছি না। বরং আমরা এখানে সেই অর্থের ব্যাখ্যা করব, যা প্রসঙ্গের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সুস্পষ্ট আরবি ভাষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
প্রসঙ্গ হলো, ফেরেশতারা যখন বুঝতে পারলেন না যে কেন আল্লাহ আদমকে পৃথিবীতে খলিফা করেছেন, তখন তারা উপলব্ধি করলেন যে, সেই সৃষ্টিজীব, যার হাতে আল্লাহ পৃথিবীর কর্তৃত্ব দিয়েছেন, সে পৃথিবীতে রক্তপাত ঘটাবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। ফেরেশতারা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা এবং তাঁরা আল্লাহর ফয়সালা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ পোষণ করার কথা কল্পনাও করতে পারেন না। তাই তাঁরা আল্লাহ তা’আলার পবিত্রতা বর্ণনা করে বললেন, “আমরা তো আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করি ও আপনাকে পবিত্র বলে মান্য করি।” মূলত, তাঁরা তাঁদের এই বক্তব্যের মাধ্যমে জানতে চেয়েছিলেন যে, এই নতুন সৃষ্টির যে কর্তৃত্ব থাকবে, তার পিছনে আল্লাহর কী হিকমত (জ্ঞানগর্ভ উদ্দেশ্য) রয়েছে।
এবং যেহেতু তাঁদের প্রশ্ন জানার জন্য ছিল, অস্বীকারের জন্য নয়, তাই আল্লাহ তা’আলা তাঁদের সামনে তাঁর কিছু হিকমত তুলে ধরলেন। তিনি দুটি উত্তর দিলেন:
১. সার্বিক (সারগর্ভ) উত্তর:
“আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।”
এই সার্বিক উত্তর আল্লাহর সমস্ত আদেশ ও কার্যকলাপের পেছনে থাকা প্রশ্নের জন্য যথেষ্ট এবং এটি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি এনে দেয় ও তাঁদের ঈমানকে আরও বৃদ্ধি করে।
২. বিশদ উত্তর:
আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের সন্দেহ দূর করতে চাইলেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য স্পষ্ট করতে চাইলেন যে, খিলাফতের উদ্দেশ্য কী। তাই তিনি তাঁদের জানিয়ে দিলেন যে, আদমকে সৃষ্টি করার মূল লক্ষ্য হল তাঁর পবিত্র ও উৎকৃষ্ট সন্তানরা। তিনি আদম (আ.)-কে তাঁর নির্বাচিত সন্তানদের নাম শিখিয়ে দিলেন, যাঁদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন।
তাবারি আবদুর রহমান ইবনে জায়েদ ইবনে আসলাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ওই নামগুলো আদমের বংশধরদের নাম। আর নাম বলতে এমন সবকিছু বোঝানো হয়, যা পরিচয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যও অন্তর্ভুক্ত। তাই আল্লাহ আদমকে তাঁদের নাম এবং তাঁদের বৈশিষ্ট্য শিখিয়েছিলেন—যেমন, সততা, তাকওয়া, কৃতজ্ঞতা, ধৈর্য, সদাচার, একনিষ্ঠতা, ইসলাম, আল্লাহর স্মরণ, আনুগত্য এবং সকাল-সন্ধ্যা তাঁর প্রশংসা করা।
“তারপর তিনি তাঁদের সামনে উপস্থাপন করলেন”—অর্থাৎ, আদম (আ.)-এর নির্বাচিত সন্তানদের, যেমন নূহ, ইবরাহিম, মুসা, মরিয়ম, ঈসা, মুহাম্মাদ, খাদিজা, আয়িশা এবং তাঁদের মতো অন্যদের ফেরেশতাদের সামনে উপস্থিত করলেন এবং বললেন:
“তোমরা আমাকে এদের নামগুলো বলে দাও,”
এবং তাঁদের দিকে ইঙ্গিত করলেন। তারপর বললেন:
“তোমরা কি মনে করো যে এরা পৃথিবীতে রক্তপাত ঘটাবে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করবে?”
“যদি তোমরা সত্যবাদী হও”—অর্থাৎ, যদি তোমাদের ধারণা সত্য হয় যে আদম (আ.)-এর সন্তানরা শুধুই দুষ্কর্ম করবে ও রক্তপাত ঘটাবে।
ফেরেশতারা যখন তাঁদের সামনে সেই পবিত্র ও নির্বাচিত মানুষদের চেহারা দেখলেন, তখন তাঁরা বিস্মিত হয়ে গেলেন এবং তাঁদের ভুল ধারণা স্পষ্ট হয়ে গেল। তাঁরা সাথে সাথে বললেন:
“আপনার মহিমা পবিত্র! আমাদের কোনো জ্ঞান নেই, তবে যা আপনি আমাদের শিখিয়েছেন তা ছাড়া। নিশ্চয়ই আপনিই সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”
এরপর আল্লাহ তা’আলা আদমকে বললেন,
“হে আদম! তুমি তাঁদের নাম বলে দাও।”
তখন আদম দাঁড়ালেন এবং বললেন,
“এইজন্য আমার সন্তান নূহ—তিনি একজন নবী, প্রেরিত, এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ বান্দা।
এটি আমার সন্তান ইবরাহিম—তিনি ধৈর্যশীল, কোমলপ্রাণ, অনুতপ্ত, একনিষ্ঠ মুসলিম।”
এভাবে তিনি একে একে ফেরেশতাদের সামনে তাঁর নির্বাচিত সন্তানদের পরিচয় ও গুণাবলি জানিয়ে দিলেন।
এবং এই ব্যাখ্যা الضمير “هم” (তাঁদের) সর্বনাম এবং اسم الإشارة “هؤلاء” (এরা) ইশারাসূচক শব্দের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মূলত, الضمير “هم” সাধারণত বুদ্ধিমান সত্তাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, এবং “هؤلاء” নিশ্চিত করে যে, তারা এমন সত্তা যাঁদের প্রতি ইঙ্গিত করা সঠিক।
অতঃপর, যখন আদম তাঁর সন্তানদের বর্ণনা করা শেষ করলেন এবং ফেরেশতাদের সামনে আল্লাহ تعالى-এর খিলাফত নির্ধারণের প্রজ্ঞা স্পষ্ট হয়ে গেল, তখন আল্লাহ বললেন: “আমি কি তোমাদের বলিনি যে, আমি আসমান ও জমিনের অদৃশ্য বিষয়সমূহ জানি?”
আর ফেরেশতারা তখনই তাঁদের ভুল ধারণা বুঝতে পেরেছিলেন, যখন আল্লাহ তাঁদের বলেছিলেন: “নিশ্চয়ই আমি জানি যা তোমরা জানো না।” তবুও, আল্লাহ তাঁদের প্রতি অনুগ্রহ করে এই প্রদর্শন ও বাস্তব ব্যাখ্যার সুযোগ দিলেন, যাতে ফেরেশতারা আল্লাহর প্রজ্ঞাকে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারেন এবং এটি কিয়ামত পর্যন্ত একটি সাক্ষ্য হিসেবে স্থায়ী থাকে।
——————–
# তাফসির
লিখেছেন :
মুহাম্মাদ আকরাম নাদভী – অক্সফোর্ড।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা:
মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।