AkramNadwi

طوال، مئون، مثانى ও مفصل

https://t.me/DrAkramNadwi/5900

بسم الله الرحمن الرحيم.

|| প্রশ্ন:

মান্যবর, ড. জামশেদ নদভী, মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিম্নলিখিত প্রশ্ন প্রাপ্ত হয়েছে:

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আপনি ভালো আছেন এবং আপনি রমজানুল মুবারকের সৌভাগ্য ও বরকত থেকে যথাযথভাবে উপকৃত হচ্ছেন। আল্লাহ তাআলা আমার মতো গুনাহগারের জীবনেও এই বরকতময় মাসের কল্যাণ ও রহমতের পুরোপুরি না হোক, অন্তত কিছু ছিটেফোঁটাও বর্ষিত করলেই আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয় হবে। এ ব্যাপারে দোয়ার বিশেষ অনুরোধ রইল।

একটি বিদ্যাগত সংশয় সামনে এসেছে, আশা করি আপনি তা নিরসন করবেন। কুরআনের সূরাগুলোকে তিওয়াল, মাঊন (বা মসানী) এবং কিসার এই শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী বর্ণনা করা হয়ে থাকে। তবে এই শ্রেণিবিভাগের মধ্যে “মাঊন” এর যে সংজ্ঞা বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, তা পুরোপুরি এই সূরাগুলোর ওপর প্রযোজ্য হয় না।

প্রচলিত সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যার বাইরে কি কোনো ব্যতিক্রমী মতামত পাওয়া যায়? যদি না পাওয়া যায়, তাহলে প্রচলিত সংজ্ঞা এবং এই সূরাগুলোর আয়াতসংখ্যার মধ্যে কীভাবে সামঞ্জস্য স্থাপন করা সম্ভব?

আপনার কাছে প্রত্যাশা রাখছি যে, আপনি আমার এই সংশয় দূর করে কৃতজ্ঞ হওয়ার সুযোগ দেবেন।
বিশেষভাবে দোয়ার অনুরোধ রইল এবং সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের আমার সালাম পৌঁছে দিবেন।

|| উত্তর:

এই পরিভাষাগুলোর বিষয়ে সর্বসম্মত মত থাকলেও এগুলোর সংজ্ঞা ও নির্ধারণ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। আমার দৃষ্টিতে যে মতটি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, সেটিই এখানে উল্লেখ করছি। আশা করি, এই ব্যাখ্যা আপনার সংশয় কিছুটা হলেও দূর করতে পারবে।

১. তিওয়াল (বড় সূরাগুলো):
তিওয়াল সাধারণত কুরআনের প্রথম দিকের সাতটি বড় সূরাকে বলা হয়। সেগুলো হলো:

১. সূরাতুল বাকারা
২. সূরাতু আলে ইমরান
৩. সূরাতুন্নিসা
৪. সূরাতুল মায়িদা
৫. সূরাতুল আনআম
৬. সূরাতুল আরাফ
৭. সূরাতুল আনফাল ও সূরাতুত তাওবা

সূরাতুল আনফাল ও সূরাতুত তাওবাকে একত্রে গণনা করার কারণ হলো, এই দুই সূরার মাঝে ‘বিসমিল্লাহ’ নেই।

২. মাঊন (প্রায় ১০০ আয়াতবিশিষ্ট সূরাগুলো):

মাঊন বলতে সাধারণত সেই সূরাগুলো বোঝানো হয় যেগুলোর আয়াতসংখ্যা প্রায় একশো। এর মধ্যে কিছু সূরার আয়াতসংখ্যা একশো ছাড়িয়ে গেছে, আবার কিছু সূরার আয়াতসংখ্যা একশোর কিছু কম।

মাঊনের অন্তর্ভুক্ত সূরাগুলোর কিছু উদাহরণ:

সূরা ইউনুস
সূরা হূদ
সূরা ইউসুফ
সূরা আর-রাদ
সূরাহ ইবরাহীম
সূরা হিজর
সূরা নাহল
সূরা ইসরা
সূরা কাহফ
সূরা মারইয়াম
সূরা ত্বাহা
সূরা আম্বিয়া
সূরা হাজ্জ
সূরা মুমিনুন
সূরা নূর
সূরা ফুরকান
সূরা শু’আরা
সূরা নমল
সূরা কাসাস
সূরা আনকাবূত ইত্যাদি।

৩. মাসানী (পুনরাবৃত্ত সূরাগুলো):

কুরআনে “মাসানী” শব্দের উল্লেখ রয়েছে:
“আমি তোমাকে সাতটি মাসানী এবং মহাগ্রন্থ (কুরআন) দান করেছি।” (সূরাহ হিজর ৮৭)

তবে “মাসানী” বলতে কী বোঝানো হয়েছে, সে ব্যাপারে বিভিন্ন মত রয়েছে।

কিছু বিদ্বানদের মতে, মাসানী বলতে সাতটি বড় সূরা (তিওয়াল) বোঝানো হয়েছে।

তবে গ্রহণযোগ্য মত হলো, “মাসানী” বলতে পুরো কুরআনকেই বোঝানো হয়েছে। কুরআন নিজেই বলে:

“আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী অবতীর্ণ করেছেন, যা পরস্পর সদৃশ ও বারবার পুনরাবৃত্ত কিতাব।” (সূরাহ যুবর ২৩)

মাওলানা ফারাহীর মতে: কুরআনের সূরাগুলো সাতটি ভাগে বিভক্ত, এবং প্রতিটি ভাগে দুইটি করে সূরা রয়েছে। এই কারণেই পুরো কুরআনকে “মাসানী” বলা হয়, কারণ এতে বিষয়বস্তুর পুনরাবৃত্তি রয়েছে।

একটি হাদিসে সূরাতুল ফাতিহাকে “সাব’উল মাসানী” বলা হয়েছে। এর কারণ হলো, সূরাতুল ফাতিহা হলো কুরআনের ভূমিকা। কুরআনের পুরো বিষয়বস্তু সংক্ষেপে এতে রয়েছে।

৪. মুফাসসাল (সংক্ষিপ্ত সূরাগুলো):

কুরআনের শেষ অংশে সংক্ষিপ্ত সূরাগুলোকে “মুফাসসাল” বলা হয়। এই নাম সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম-এর যুগ থেকেই প্রচলিত।

মুফাসসাল বিভাগ তিনটি ভাগে বিভক্ত:

১. তিওয়াল মুফাসসাল (সূরা ক্বাফ থেকে সূরা নাযিআত পর্যন্ত)

অধিকাংশ আলেমের মতে, তিওয়াল মুফাসসালের শুরু সূরাতুল হুজুরাত থেকে। তবে আমি যে মতটিকে গ্রহণযোগ্য মনে করি, সেটি অনুযায়ী এটি সূরাতুল ক্বাফ থেকে শুরু হয়।

২. আওসাত মুফাসসাল (সূরাতুল আবাসা থেকে সূরাতুল বাইয়্যিনাহ পর্যন্ত)

৩. কিসার মুফাসসাল (সূরাতুয যিলযাল থেকে শেষ কুরআন পর্যন্ত)

——————–

# প্রশ্নোত্তর #আলোচনা

মূল : ড. আকরাম নদভী, অক্সফোর্ড, ইউকে।
অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা : মাওলানা মারজান আহমদ, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *